পেঁয়াজ বীজ চাষে হাসি ফুটেছে ফরিদপুরের কৃষকদের। গত কয়েক বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এবারও স্বপ্নটাও বড়। আর তাই একে সোনার সাথে তুলনা করছেন।
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সাড়ে ১৭শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করা হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় এই জেলার প্রতি বছরই পেঁয়াজ বীজের চাষ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী জানান, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলের ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিন হবে। যার বাজার প্রায় মূল্য (গত বছরের মতো হলে) ৫শ কোটি টাকার মতো।
আরও পড়ুন: দেড় বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু
তিনি জানান, সরকারের বিএডিসির সংগৃহীত মোট পেঁয়াজ বীজের ৭০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে করে থাকে। এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা করে এই কারণে এই ফসলকে ব্লাক গোল্ড বা কালো সোনা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
সরেজমিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে দেখা গেছে, সেখানকার চাষিরা বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যস্থ রয়েছে। অনেক কৃষক-কৃষাণী চুক্তিতে (পেঁয়াজ বীজ গাছে পেঁয়াজ তাদের আর বীজ মালিকের) এই কাজে অংশ নিচ্ছে।
অম্বিকারপুর এলাকার গোবিন্দুপুর মাঠে কৃষক হারিজ মোল্লা, জুলেখা বেগম, ফাতেমা খানমের মতো অনেকেই জানান, এই মৌসুমে বীজ তোলার কাজ করে যে পেঁয়াজ পাই তাই দিয়ে সংসারের সারা বছরের পেঁয়াজের চাহিদা মিটে যায়।
মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কৃষক রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর জেলা থেকে এসেছেন।
এদের মধ্যে রহমান মাতুব্বর, আশিক মেল্লা বলেন, পেঁয়াজ বীজ তোলা সময় আমাদের মতো অনেকেই ফরিদপুরে আসে জনবিক্রির কাজে। এই সময়টায় আমাদের ভালো আয় হয় ।
তারা জানান, করোনার সময়ে এমনিতেই কাজের অভাব, তাই ফরিদপুরের এই মৌসুমে আমাদের মতো অনেকেই চলে আসে জনদিতে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন মাগুরার কৃষকরা
জেলা সদর উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা জানান, প্রচণ্ড রোদ থাকার পরেও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ভালো ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ উৎপাদন হবে। গত বছরের বাজার মূল্যে ছিল প্রতি মণ দুই লাখ টাকা মতো। আর খরচ প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বিঘা প্রতি ভালোই আয় হবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের বিএডিসির তালিকাভুক্ত পেঁয়াজ বীজ চাষি মো. আকবর খান বলেন, ‘এই বছর চার বিঘা জমিতে বীজের চাষ করছি। আশা করছি ৮ মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে।’
একই গ্রামের পেঁয়াজ বীজের চাষ করে লাভলি- ইমতিয়াজ দম্পতি।
তারা জানান, পেঁয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মত।
তারা বলেন, এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিএডিসি কতৃপক্ষ সব চাষিদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে না।
আমাদের দাবি, সরকারের যেহেতু বীজের দরকার, তবে কেনো সকলের কাছ থেকে নিবে না।
গোবিন্দুপুর গ্রামে আরেক পেঁয়াজ বীজ চাষি শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়। আমার মতো বর্গা চাষিদের লোন দেয় না। আমরা বাধ্য হয়ে এনজিও’র কাছ থেকে অধিক সুদে লোন নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করি।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও এ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবকরা তাদের কর্মস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ করার সহজ উপায় হলো বীজ চাষ।
তিনি বলেন, ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পেয়াজ বীজ চাষীদের এখন আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, সারা দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের বড় অংশীদার ফরিদপুরের বীজ চাষিরা।